নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর। এখানে একটি পাহাড় কাটা হচ্ছিল এক বছরের বেশি সময় ধরে। গত কয়েকদিন পূর্বে পরিদর্শন করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)। তখন বিশাল পাহাড় কাটা হয় বলে প্রতিবেদন দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উত্তম কুমার দাশ। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ফুল মিয়া বাদী হয়ে অভিযোগ করেন। যিনি পাহাড় কাটছেন তাকে নোটিশ করে গাইট ওয়াল নির্মানের নির্দশনা দেয়া হয়েছে। ঐ নির্দেশ পালন হচ্ছে না তিন মাস হয়ে গেছে। জানা যায়, উপজেলার গজনাইপুর দেওপাড়া গ্রামে ফুল মিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন। তার বসত বাড়ির পাশের টিলা (পাহাড়) প্রায় ২০ ফুট উঁচু একটি পাহাড় ছিল। কিন্তু গোপনে পাশের বাড়ির অলিদ মিয়া ও সাজ্জাদ মিয়া গংরা হঠাৎ একটি একদিন রাতের আধারে এক্সভেটর মেশিন লাগিয়ে জোর পূর্বক পাহাড়টি কেটে প্রায় ১০ হাত গভীর করে মাটি অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। এখন বসত ঘরসহ বাড়িটি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যে কোন মুহুর্তে এই বসত ঘর ও বাড়ি ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, বর্ষার বৃষ্টিতে তার বসত ঘর ধসে প্রায় ৩০/৪০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে জানালে তার একটি সালিশ সভার মাধ্যমে পাহাড়ের কাটা অংশে একটি গাইট ওয়াল (সীমানা দেয়াল) নির্মান করার জন্য লিখিত নির্দেশ দিলেও প্রতিপক্ষ এখনো সেই আদেশ পালন করেননি। ফুল মিয়া এ ব্যাপারে লিখিত ভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে তার নির্দেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উত্তম কুমার দাশ ঐ এলাকা সরজমিনে পরিদর্শন করেন। তিনি এ ব্যাপারে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরা পাহাড় কাটার সত্যতা পেয়ে অলিদ মিয়াকে বলেছি দ্রুত ফুল মিয়ার বাড়ি ও বসত ঘরের পাশে সীমানা প্রাচীর নির্মান করে দেয়ার জন্য। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেখানে পাহাড় কেটে সমতল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সবাই প্রভাবশালী তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে ঐ বাড়ির পাশে প্রবাসী মহন মিয়া নামে এক ব্যক্তি এক্সভেটর মেশিন দিয়ে একটি পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে জায়গা সমতল করেছেন। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটার জন্য গত এক বছরে বেশ কয়েক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু জরিমানা দিয়ে আবার পাহাড় কেটেছেন তাঁরা। ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাহাড়গুলো রক্ষা করা যায়নি। পরিবেশ বিধ্বংসী এসব কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বড় একটি অংশ রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালী। অন্যদিকে পাহাড়ে বসবাসরত প্রাণীকূল হারাচ্ছে তাদের নিরাপদ আবাসস্থল। তবে এ ব্যাপারে কোন প্রকার কার্যকারী পদক্ষেপ চোখে পড়ছেনা বলে সংশিষ্ট প্রশাসন নির্বিকার বলে দাবী করছেন স্থানীয় জনসাধারণ।
গত বৃহস্পতিবার উপজেলার দিনারপুর দেওপাড়া এলাকায় পাহাড় কাটার খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উত্তম কুমার দাশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পাহাড় কাটা বন্ধ রাখার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারকে বলে আসেন। গজনাইপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুব আলী নুরু বলেন, এখানে একটি পাহাড় কাটা হচ্ছিল এক বছরের বেশি সময় ধরে। তিনি খবর পেয়ে বিষয়টি আপোষে মীমাংসা করেছেন। তিনি বলেন আসলে ফুল মিয়ার বসত ঘরের পাশে এভাবে পাহাড় কাটা সঠিক হয়নি।
নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর পাহাড়ী এলাকা সরেজমিন ঘুরে স্থানীয় জনসাধারণের সাথে আলাপকালে পাহাড় কাটার ব্যাপারে জানতে চাইলে কয়েকজন যুবক এ প্রতিবেদককে জানান, বিগত কয়েকমাস যাবৎ এলাকার বেশ কিছু প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে পাহাড় কাটার একটি সিন্ডিকেট চক্র চালাচ্ছে নির্বিচারে বিভিন্ন এলাকার ছোট বড় পাহাড় ও টিলা কাঠা। তবে এ বিষয়ে সংশিষ্ট প্রসাশন নির্বিকার বলে চক্রটি পরিবেশ বিরোধী এমন একটি ধ্বংসাত্মক কাজ প্রকাশ্য করতে পারছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উত্তম কুমার দাশ এ প্রতিবেদকে জানান, পাহাড় কর্তনের আর কোন অভিযোগ আমরা এখনও পায়নি। কোন অভিযোগ পেলে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে অচিরেই আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।