টানা বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল এবং ভারতের গজলডোবার সব কটি গেট খুলে দেওয়ায় তিস্তা ব্যারাজে নদীর পানি আবারও বাড়ছে। এতে তিস্তা ও ধরলা নদীর আশপাশের চরের গ্রামগুলোতে টানা সাতদিন ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। ৬৩ চরে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টায় লালমনিরহাটের দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারাজ রক্ষায় খুলে দেয়া হয়েছে ৪৪টি গেট। এতে জেলার চরাঞ্চলের ১৭টি গ্রাম এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে পাটগ্রামের দহগ্রাম, গড্ডিমারি, সির্ন্দুনা, ডাউয়াবাড়ি, ভোটমারি, মহিষখোচা, গোকুণ্ডা, রাজপুর, কুলাঘাট, মোগলহাট এলাকার কয়েকশ পরিবার বেশি দুর্ভোগে পড়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার সির্ন্দুনা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, ‘গত ১৩ আগস্ট থেকে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমার ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। গত ১০ দিন দুই নম্বর ওয়ার্ডের চিলমারী পাড়ার দুই শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। পরিবারগুলো সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, আমন ধানের ক্ষেতসহ এলাকার বেশকিছু রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। বসতবাড়িগুলোতে হাঁটু পানি। চুলায় রান্না করে খেতে পারছে না। শুকনা খাবার চিড়া, মুড়ি, গুড়, বিস্কুটের ওপর নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের।
সির্ন্দুনা ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রমজান আলী বলেন, নদী ভাঙনকবলিত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ১০ কেজি চাল ছাড়া সরকারি সাহায্য পায়নি।
এদিকে উজানে পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে তিস্তার পাশাপাশি বেড়েছে ধরলা নদীর পানিও। হাতীবান্ধা উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে বন্যা দেখা দিয়েছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা-ধরলায় পানি বাড়ায় প্রায় ৩১টি ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
তিস্তা ব্যারাজের পানি বিজ্ঞান শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইলিয়াস আলী জানান, ভারত থেকে প্রচণ্ড গতিতে পানি বাংলাদেশের দিকে আসছে। তিস্তা ব্যারাজের সব গেট খুলে দিয়ে পানির চাপ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। কী পরিমাণ পানি আসবে তা ধারণা করা যাচ্ছে না।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামিউল আমিন জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।