প্রকৃতির লীলাভূমি চন্দ্রডিঙা পাহাড়, শান্ত মনোরম এই পরিবেশ ঘিরে আছে মন মাতানো আবহ। ছোটখাট পাহাড়, রাবার গাছের বাগান, লেবু-পেয়ারার গাছ, সেগুন-মেহগুনি, পাহাড়ের নিচে সবুজ প্রান্তর। ভ্রমণ পিপাসুদের আকর্ষণ করার জন্য চোখ জুড়ানো উপাদান ছড়িয়ে আছে এ পাহাড়ে। পাহাড়ের পূর্ব পাশের দৃশ্যটিও নজর কাড়ে ভ্রমণ প্রেমিদের। পাহাড়ে উঠলে দূরের আকাশকেও কাছে মনে হয়। সবুজ ও হালকা নীলের চোখ ধাঁধানো এ দৃশ্য নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি চন্দ্রডিঙা পাহাড় এই জায়গাটি পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠছে না প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও উদ্যোগের অভাবে। সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অভাবে সৌন্দর্য্যমণ্ডিত কলমাকান্দা উপজেলার এ পাহাড়কে আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব হয়নি ভ্রমণ বিলাসী মানুষের কাছে।
কলমাকান্দা উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৮/১০ কিলোমিটার দূরে রংছাতী ইউনিয়নের পাঁচ গাও সীমান্তে অবস্থিত এই চন্দ্রডিঙা পাহাড়। অনেক আগে থেকেই এই পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠেছে কয়েকটি গ্রাম। এই গ্রামগুলোও ভ্রমণ পিপাসুদের আকৃষ্ট করতে পারে। স্থানীয়দের রয়েছে সংস্কৃতি সমৃদ্ধ বৈচিত্রময় জীবনধারা। বন, পাহাড়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পাহাড়ি জন্তুদের সাথে মিলে জীবন সংগ্রামের এক ভিন্ন চিত্র। স্থানীয় জনপদের বাসিন্দা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা সম্ভব পর্যটকদের।
এই পাহাড়ে অবিরাম ছুটে চলে জলাধারা। কিন্তু শীতে হয়ে যায় শীর্ণকায়া। পাহাড়ি জলস্রোত কখনই বন্ধ হয়না। সারা বছর আপন মনেই বয়ে চলে এই জলরাশি। এখানকার দর্শনীয় প্রকৃতি, তীর্থস্থান ও সংস্কৃতি পর্যটকদের বারবার আকর্ষণ করে।
এখানকার বেশ কয়েকটি পাহাড় ও পাহাড়ি ঢালুতে বেসরকারি পর্যায়ে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল বিশাল রাবার বাগান, প্রতিদিন শত শত লিটার উন্নতমানের কাঁচা রাবার উৎপাদন হচ্ছে। পাশাপাশি কয়েকটি পাহাড়ে বনায়ন শুরু করা হয়েছে। শুরু হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে শাক-সবজির কিছু কিছু বাগানও। এতে চাষ হচ্ছে লেবু, পেয়ারা, তরমুজ, ঝিঙ্গা, করলা ইত্যাদি। উৎপাদিত এসব সবজি জেলার অন্যান্য এলাকার অধিকাংশ লোকের চাহিদাও মেটাচ্ছে। কলমাকান্দা উপজেলার আয়তন ৩৭৭ দশমিক ৪১ বর্গ কিলোমিটার অবস্থান ২৪°৫৬ থেকে ২৫°১১` উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৪৪` থেকে ৯০°৫৮ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমান্ত উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য দক্ষিণে বারহাট্টা ও নেত্রকোনা সদর উপজেলা, পূর্বে ধর্মপাশা উপজেলা পশ্চিমে দুর্গাপুর উপজেলা, জনসংখ্যা ২৩৪৩৯৮, পুরুষ ১২০২৫৫, মহিলা ১১৪১৪৩। মুসলিম ১৯৫৯৯৭, হিন্দু ২৯৪৫৪,বৌদ্ধ ৮৬৭৭, এবং অন্যান্য ২৭০.জন। এই উপজেলায় গারো,হাজং, হদি, বানাই প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস আছে। এই উপজেলায় রয়েছে সোমেশ্বরী ও গুনাই নদী।পাকাটা বিল,বাহার বিল, উল্লেখযোগ্য। প্রশাসন কলমাকান্দা থানা গঠিত হয় ১৯৪১ সালে এবং এই থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে চন্দ্রডিঙা পাহাড়ি বনাঞ্চল। কলমাকান্দা উপজেলার পাহাড়ি বনাঞ্চলের পাদদেশে অবস্থিত বিখ্যাত কয়েকজন দরবেশের মাজার। এর অনতিদূরে পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় রয়েছে চণ্ডীর উদ্ভবস্থান বলে খ্যাত চন্দ্রডিঙা। এখানে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে দূর দূরান্তের হাজার হাজার নারী পুরুষের সমাগম ঘটে।
বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্রমণ করতে আসা কয়েকজন বলেন, পাহাড়ের এ অপরূপ লীলাভূমিতে চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ দেখে আমরা বিস্মিত। পাহাড়ের প্রতিটি দৃশ্য আমাদের নজর কেড়েছে। তবে সম্ভাবনাময় এই পর্যটন স্থানটিতে নেই কোন পর্যটনের ভালো সুবিধা। সাথে নেই কোনো রেস্ট হাউজ বা আবাসিক হোটেল, নেই কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। স্থানীয় প্রশাসন এই পাহাড়ের সৌন্দর্য্যের দিকে নজর দিত, তাহলে ভ্রমণ পিপাসুদের আগ্রহ আরো বাড়তো।
বারহাট্টা উপজেলার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে আসা তওফিক বলেন, আমি সুযোগ পেলেই বন্ধুদের সাথে ঘুরতে চলে আসি এই অপরূপ লীলাভূমিতে। তবে এ পাহাড়ের আশে পাশে আবাসিক হোটেল বা রেস্ট হাউজ না থাকায় ভ্রমণ পিপাসুদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। স্থানীয় প্রশাসন যদি এই পর্যটন কেন্দ্রটির সমস্যাগুলো সমাধানে নজর দিতেন তাহলে এ জায়গাটি পর্যটকদের আগ্রহ বাড়তো। একইসঙ্গে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়তো।
নেত্রকোনা শহর থেকে কলমাকান্দা-বাসটার্মিনাল এসে জনপ্রতি ১৩০ টাকা ভাড়ায় টেম্পু যোগে যেতে পারেন কলমাকান্দা পর্যন্ত সেখান থেকে মোটরসাইকেল অথবা যে কোনো গাড়ি দিয়ে যাওয়া যায় এই সৌন্দর্যের লীলাভূমি চন্দ্রডিঙা পাহাড়ে।