মো: মোকাররম হোসাইন
জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি:
নিত্যদিনের ব্যবহার করা প্লাাস্টিক মানব জীবনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর; এর ভয়াবহতা বুঝাতে ১৫ হাজার কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে পাড়ি দিয়ে ভারতের নাগপুরের রোহান আগরওয়াল এখন জয়পুরহাটে।
গত ৮ অক্টোবর ফেনীর বিলোনিয়া সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এই যুবক। বাংলাদেশে প্রবেশ করে ইতোমধ্যে ঘুরেছেন ৩৩ জেলায়। বাংলাদেশ থেকে গিয়ে আরও ১৫টি দেশে যেতে চান গভর্নমেন্ট সিকিম প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটির স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রোহান। হেঁটে হেঁটে ভারতের ২৭টি রাজ্য ঘুরে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন।
২০২০ সালের ২৪ আগস্ট ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসিতে গঙ্গার তীর থেকে শুরু হয় তার হাঁটা তখন তার বয়স ছিল ১৮ বছর। সেখান থেকে রাজস্থান, হরিয়ানা, দিল্লি, চণ্ডিগড়, হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, পন্ডিচেরি, কর্ণাটক, কেরালা ও গোয়া হয়ে ভারতের মোট ২৭টি রাজ্য পরিভ্রমণ শেষে বাংলাদেশে এসেছেন তিনি।
বাংলাদেশ ভ্রমণ শেষে ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, চীন, হংকং, ম্যাকাও, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়াসহ আরও বেশ কিছু দেশে যেতে চান রোহান।
রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ঘুরেছেন রোহান। পথ চলতে চলতেই তার পরিচয় বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে। পথের পরিচিত হওয়া মানুষেরাই রোহানকে সহযোগিতা করেছেন, খরচ, খাবার, থাকার ব্যবস্থা করে।
তিনি নওগাঁ জেলা ঘুরে সর্বশেষ ৭ জানুয়ারি আসেন জয়পুরহাটে। এই জেলায় পরিদর্শন করছেন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান অশোক কুমার ঠাকুর ঢাকা মেইল কে বলেন, ‘ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুরের রোহান আগরওয়াল সৌজন্য সাক্ষাৎ করছেন। রোহান আগরওয়াল মানুষকে সচেতন করতে, বিশেষ করে পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা তরুণদেরকে সচেতন করতে যে ভ্রমণ শুরু করেছে তা প্রশংসনীয়। এই রোহান আগরওয়ালকে সবার সহযোগিতা করা উচিত।
জয়পুরহাটে হেঁটে যাওয়ার সময় তার সঙ্গে কথা হয়। ঢাকা মেইলকে রোহান জানান, তাঁর পরিবারে বাবা-মা ও ছোট বোন আছেন। সবাই থাকেন নাগপুরে। পরিবেশ থেকে খাদ্য, পানি, বায়ু পেয়ে থাকি আমরা। অথচ এর বিনিময়ে আমাদের অবহেলা ও অসচেতনতার কারণে এবং অতিরিক্ত প্লাস্টিক বর্জ্যের ব্যবহারে পরিবেশ আজকে ভয়ংকর ক্ষতির মুখে। তাই পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষা দিতে মানুষকে সচেতন করতে, বিশেষ করে তরুণদেরকে সচেতন করতে আমি এই ভ্রমণ শুরু করেছি।
ভ্রমণ পথে তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের পাশাপাশি কথা বলছেন সাধারণ মানুষের সঙ্গেও। বোঝানোর চেষ্টা করছেন প্লাস্টিক ও পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা। প্রয়োজনে সহায়তা নিচ্ছেন বাংলাদেশী দোভাষীর। সৌজন্য সাক্ষাৎ করছেন স্থানীয় প্রশাসন, গণমাধ্যমকর্মী ও সচেতন নাগরিকদের সাথেও। তার আন্দোলন ও পরিকল্পনা নিয়ে বিশদ আলোচনা ছাড়াও সহায়তা নিচ্ছেন প্রয়োজনীয় বিষয়ে।
রোহান আরও বলেন, এ পৃথিবী শুধু মানুষের জন্য নয়। সব প্রাণী ও উদ্ভিদেরও। তাই পরিবেশের বিষয়ে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। এটা সব মানুষের দায়িত্ব। আমি বিশ্বাস করি তরুণ প্রজন্ম যদি পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা নিয়ে সচেতন হয়, তাহলে অনেক কিছু বদলে যাবে।