নিহত আশিকুর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মেড্ডা এলাকার আশরাফ উদ্দিনের ছেলে। তিনি দৈনিক পর্যবেক্ষণ এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি বেওয়ারিশ লাশ দাফনকারী সংগঠন বাতিঘরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
এদিকে ঘটনার পরপর সন্ধ্যা সাতটার দিকে অভিযান চালিয়ে মো. রায়হান (২৫) নামের এক তরুণকে আটক করেছে পুলিশ। রায়হান জেলা শহরের ভাদুঘর এলাকার বাসিন্দা।
বাতিঘর, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে জেলা শহরের ফারুকী পার্কে বাতিঘর সংগঠনের একটি বৈঠক ছিল। সংগঠনের অন্য সদস্যরা বাড়ি থেকে আশিকুরকে ডেকে সেখানে নিয়ে যান। বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় পার্কের প্রধান ফটক থেকে শহরের ভেতরে যাওয়ার জন্য সংগঠনের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে ওঠেন আশিকুর।
এ সময় এগিয়ে এসে আশিকুরের বুকের বাঁ পাশে ছুরিকাঘাত করেন রায়হান। পরে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান রায়হান। সংগঠনের সদস্যরা আশিকুরকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. আরফাত তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
আশিক বিবাহিত ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর নাম ঝুমা বেগম। আফ্রিদি ইসলাম নামে তাঁর দুই বছরের একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আশিকুরের মা রহিমা বেগম, স্ত্রী ঝুমা বেগম, বোন সুমা বেগম হাসপাতালের মর্গের সামনে আহাজারি করছেন। তাঁদের সঙ্গে আশিকুরের শিশুসন্তানও ছিল। ঝুমাকে কোনোভাবে সান্ত্বনা দেওয়া যাচ্ছিল না। বারবার স্বামীর কাছে ছুটে যেতে চাইছেন তিনি। স্বজনেরা কোনোমতে তাঁকে আটকে রেখে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
বাতিঘর সংগঠন ব্লাড ব্যাংকের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, সপ্তাহখানেক আগে একজনকে রক্ত দেওয়ার কথা বলে শহরের কাউতলী এলাকার ওই রক্তদাতা যাননি। বিষয়টি নিয়ে ওই রক্তদাতার সঙ্গে আশিকুরের কথা-কাটাকাটি হয়। সেখানে থাকা রায়হান বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আসেন।
একপর্যায়ে আশিকুরের সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটি হয়। আশিকুর একপর্যায়ে শার্টের কলার ধরে রায়হানকে থাপ্পড় মারেন। সে সময় উপস্থিত অন্য সদস্যরা তাঁদের নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে যান। বাতিঘর সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক আজহারুল ইসলাম তাঁদের দুজনকে মিলিয়ে দিয়েছিলেন।
আশিকুরের বোন সুমা বেগম বলেন, তাঁর ভাই দুপুরে বাড়িতে ছিলেন। বন্ধুরা তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। কে জানত এই যাওয়াই তাঁর শেষ যাওয়া হবে। আশিকুরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাঁরা আশিকুরের হত্যার বিচারের দাবি করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) জয়নাল আবেদীন বলেন, পূর্ববিরোধের জেরে একজন দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন আশিকুর। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত রায়হানকে আটক করা হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত আশিকুরের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।