সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকার ঝেরঝেড়িপাড়ার বাসিন্দা সীমা বেগম বাড়িতে একাই থাকতেন। কদিন ধরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছিল সিলেট নগর ও আশপাশের এলাকায়। গত রোববার রাতে হঠাৎই তিনি অপরিচিত একটি প্রাণীর ডাক শুনতে পান ঘরের ভেতর। গভীর রাতে এমন শব্দ শুনে অনেকটা ভয় পেয়ে যান। পরে তিনি প্রতিবেশী নাতি শাহান আহমদকে ডাক দিয়ে বিষয়টি জানান।
রোববার রাতেই শাহান আহমদ টর্চের আলো জ্বেলে সীমা বেগমের ঘর তল্লাশি করে টিকটিকির মতো দেখতে একটি প্রাণীর উপস্থিতি বুঝতে পারেন। পরে স্থানীয় আরেক তরুণের সহায়তায় হাতে কাপড় পেঁচিয়ে ওই প্রাণীকে ধরে ফেলেন। শাহান আহমদ অপরিচিত প্রাণীটি হিংস্র প্রাণী অথবা কুমিরের বাচ্চা মনে করে প্রথমে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। এর আগে প্রাণীটির ব্যাপারে বাসিন্দা গোলজার আহমদকে জানিয়ে মুঠোফোনে ছবি তুলে পাঠান। পরে গোলজারই প্রাণীটিকে তক্ষক হিসেবে শনাক্ত করেন।
গোলজার আহমদ বলেন, পরিবেশকর্মী অনেকের সঙ্গে পরিচিত হওয়ায় বেশ কয়েকটি তক্ষক উদ্ধার করে বন বিভাগের কাছে তুলে দিয়েছেন। শাহান আহমদ তাঁকে একটি প্রাণী উদ্ধারের ব্যাপারে জানিয়ে ছবি তুলে পাঠান। প্রথমে শাহান ওই প্রাণীকে কুমিরের বাচ্চা অথবা হিংস্র প্রাণী মনে করে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। প্রাণীটি তক্ষক হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পর তা বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করতে বলা হয়।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে দক্ষিণ সুরমার ঝেরঝেড়িপাড়ায় বন বিভাগ ও পরিবেশকর্মীদের হাতে শাহান আহমদ তক্ষকটি হস্তান্তর করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা গোলজার আহমদ, পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির, বন বিভাগের ফরেস্ট কর্মকর্তা ইসলাম উদ্দিন ও তাহের আহমদ।
ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির বলেন, তক্ষক অত্যন্ত নিরীহ প্রাণী। এটি মানুষের কোনো ক্ষতি করে না। প্রাণীটি এখন অনেকটা দুর্লভ হয়ে গেছে।
সিলেট বন বিভাগের ফরেস্ট কর্মকর্তা ইসলাম উদ্দিন বলেন, তক্ষকটি অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে। বৃষ্টির কারণে লোকালয়ে ঢুকে ঘরে আশ্রয় নিয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দা এবং পরিবেশকর্মীদের সহযোগিতায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছে নিরীহ প্রাণীটি। উদ্ধারের পর খাদিমনগর উদ্যানে তক্ষকটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।