মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ঢাকার ছাত্রলীগ নেতাদের চা বাগানের নারী শ্রমিকদের জেরিন চা বাগানের ডেপুটি ম্যানেজারকে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে চা বাগানের শ্রমিকরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। এ সময় একটি রিসোর্টে ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার রাধানগর এলাকার গ্রান্ড মুবিন রিসোর্টে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হামলায় দুইপক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
আহতরা হলেন- ঢাকা থেকে আসা ছাত্রলীগের নেতা মো. রাফি (২৯)ও রাসেল মিয়া (২৭)। এছাড়া জেরিন চা বাগানের শ্রমিক- মামুন মিয়া (২৪), অঞ্জলী (২৫), ছন্দা সবর (৩৫), বিশ্বমনী রিকিয়াশন (২৬), পারুল বেগম (৩০), ভারতী সাঁওতাল (৪০), অনিতা গোয়ালা (৪০), আলো মনি (২৫), সৃতি সাংমা (৪০), মুসলিম মিয়া (২০), উত্তম গড়াই (২৫), আব্দুল কাদির (২৬) ও ইন্দ্রজিত দাস (২৫)।
গ্রান্ড মুবিন রিসোর্ট ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা মহানগর (উত্তর) ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহীম হোসেন ও ঢাকার উত্তর ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের ১৮ নেতাকর্মী গত বুধবার রিসোর্টে উঠেছিলেন। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা রিসোর্টের পার্শ্বে জেরিন চা বাগানের ৯নং সেকশনের কালাবন এলাকার ছবি তুলছিলেন।
এ সময় ওই এলাকায় কর্মরত নারী চা শ্রমিকরা তাদের ছবি তুলতে নিষেধ করলে শ্রমিকদের সঙ্গে নেতাকর্মীদের কথাকাটাকাটি হয়। পরে হামলার ঘটনাটি ঘটে।
সরেজমিন গ্রান্ড মুবিন রিসোর্টে গিয়ে দেখা যায়, রিসোর্টের চারটি রুমের আসবাবপত্র, জানালা-দরজা ভেঙে মাটিতে পড়ে আছে। রিসোর্টের সিসিটিভি, টেলিভিশন, পানির পাইপ ও ফুলের টব, চেয়ার ইত্যাদি ভেঙে রাখা হয়েছে। ঘরের ভিতর রান্না করা খাবার পড়ে রয়েছে।
রিসোর্টের মালিক আব্দুল মুবিন বলেন, ঝামেলা যা হওয়ার হয়েছে কিন্তু এভাবে আমার রিসোর্টে হামলা চালানো উচিত হয়নি। চা বাগানের শ্রমিকরা এখানে এভাবে হামলা চালানোর ফলে আমার রিসোর্টের অনেক মালামাল নষ্ট হয়েছে। আমার এই ক্ষতি কীভাবে পূরণ হবে।
জেরিন চা বাগানের ব্যবস্থাপক সেলিম রেজা বলেন, রিসোর্টের পাশের চা বাগানে নারী শ্রমিকরা চা পাতা তুলার কাজ করছিলেন। চা বাগানে নারী শ্রমিকরা খুব কম কাপড় পরে কাজ করেন। এ সময় ঢাকা থেকে আসা ছাত্রলীগের কর্মীরা চা বাগানে ঢুকে নারীদের ছবি তুলছিলেন। চা বাগানের শ্রমিকরা ও আমাদের ডেপুটি ম্যানেজার মো. আলী তাদের ছবি তুলতে নিষেধ করলে তারা ডেপুটি ম্যানেজারকে গালমন্দ করেন।
তারা বলেন, এটি সরকারি জায়গা, আমরা ছবি তুললে আপনাদের কী? ম্যানেজার বারবার তাদের নিষেধ করলে তারা উত্তেজিতভাবে কথা বলতে থাকেন। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে তারা আমাদের ডেপুটি ম্যানেজারের গায়ে হাত তুলেন। তাকে টেনে রিসোর্টে নিয়ে যেতে চাইলে চা বাগানের শ্রমিকরা বাধা দেন। ছাত্রলীগের কর্মীরা নারী শ্রমিক ও ম্যানেজারের ওপর হামলা করলে শ্রমিকরা চা বাগানের পাগলা ঘণ্টা বাজালে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে রিসোর্টে যান। পরে আমরা গিয়ে শ্রমিকদের শান্ত করে বাগানে ফিরিয়ে এনেছি।
ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, চা বাগানে ছবি তুলা নিয়ে স্থানীয় চা শ্রমিকদের সঙ্গে একটু কথাকাটাকাটি হয়েছিল। পরে স্থানীয়রা এসে এটির একটি সমাধান করে দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (তদন্ত) হুমায়ুন কবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, চা বাগানের নারী শ্রমিকদের ছবি তোলা নিয়ে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে চা শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তিনি আরও জানান, চা শ্রমিকদের হামলায় গ্রান্ড মুবিন রিসোর্ট ভাংচুর হয়। এ ব্যাপারে কোনোপক্ষই থানায় অভিযোগ করেননি।
।