আহত বাঘের হুঙ্কারে প্রতিশোধের ব্যাপারটি থাকে স্পষ্ট, সেটা বুঝতে পেরেছিল নিউজিল্যান্ড। তাই তো কিউই কোচ গ্লেন পকন্যাল জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের আগুনের জবাব আগুন দিয়েই দেবেন তারা। কিন্তু মাঠে সেটা প্রমাণ করতে পারল না সফরকারীরা। বাংলাদেশের প্রতিশোধের আগুনে ভস্ম নিউজিল্যান্ড। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টি জিতে এক ম্যাচ আগেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করলো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
লো স্কোরিং ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে সিরিজে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ঘরের মাঠের দলটি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় শেষ ও পঞ্চম ম্যাচটি হয়ে উঠলো নিতান্তই নিয়ম রক্ষার।
বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচ সেরা নাসুম আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমানের অসাধারণ বোলিংয়ে ১৯.৩ ওভারে ৯৩ রানে অল আউট হয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। জবাবে শুরুটা এলোমেলো হলেও জয়ের পথে এগিয়ে খুব একটা বেগ পোহাতে হয়নি বাংলাদেশকে। নাঈম শেখের ২৯ রানের পর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় বাংলাদেশ। এরপরও বাংলাদেশকে খেলতে হয় ১৯.১ ওভার পর্যন্ত।
টি-টোয়েন্টিতে এটা বাংলাদেশের নবম সিরিজ জয়। একাধিক ম্যাচের সিরিজ এর আগে বাংলাদেশ জিতেছে পাঁচটি। যেসব সিরিজে মাত্র একটি টি-টোয়েন্টি ছিল, এমন সিরিজ জয় আছে তিনটি।
এর আগে বাংলাদেশের জেতা সিরিজগুলো হচ্ছে- জিম্বাবুয়ে ১-০ (২০০৬), ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১-০ (২০১২), আয়ারল্যান্ড ৩-০ (২০১২), পাকিস্তান ১-০ (২০১৫), ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২-১ (২০১৮), জিম্বাবুয়ে ২-০ (২০২০), জিম্বাবুয়ে ২-১ (২০২১) ও অস্ট্রেলিয়া ৪-১ (২০২১)।
টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এখনও সিরিজ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। অবশ্য ২০০৬ সাল থেকে টি-টোয়েন্টি খেলা বাংলাদেশ এখনও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই ফরম্যাটে কোনো ম্যাচই খেলেনি।
লক্ষ্য বড় ছিল না, এরপরও এলোমেলো শুরু হয় বাংলাদেশের। দলীয় ৮ রানেই ফিরে যান লিটন কুমার দাস। এরপর সাকিব আল হাসানও বেশি সময় টিকতে পারেননি। ৮ রান করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হন। এই ওভারেরই শেষ বলে ফেরেন পুরো সিরিজে নিজের ছায়া হয়ে থাকা মুশফিকুর রহিম।
এক পাশ আগলে খেলে যেতে থাকা নাঈম শেখ দলীয় ৬৭ রানে আউট হন। এর আগে ৩৫ বলে একটি ও একটি ছক্কায় ইনিংসের দ্বিতীয় সেরা ২৯ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। জয় তুলে নেওয়ার বাকি কাজটুকু সারেন মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। মাহমুদউল্লাহ ৪৮ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৪৩ ও আফিফ ৬ রানে অপরাজিত থাকেন। নাঈম ও মাহমুদউল্লাহই কেবল দুই অঙ্কের রান করেন। নিউজিল্যান্ডের দুই স্পিনার এজাজ প্যাটেল ও কোল ম্যাকনকি একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিং করা নিউজিল্যান্ডকে পথ ভুলিয়ে দেন নাসুম আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান। নাসুম শুরু করে কিউইদের চেপে ধরেন আর শেষটা করেন মুস্তাফিজ। অস্ট্রেলিয়াকে ভালোই স্পিন ভেল্কি দেখিয়েছিলেন নাসুম। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও সেই ধারা জারি রেখেছেন বাঁহাতি এই স্পিনার। আগের তিন টি-টোয়েন্টিতে খুব একটা দাপট দেখাতে না পারলেও চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে কিউই ব্যাটসম্যানদের জন্য রীতিমতো যমদূত ওঠেন নাসুম।
অবিশ্বাস্য বোলিং করেছেন ২৬ বছর বয়সী এই স্পিনার। ৪ ওভারে মাত্র ১০ রান খরচায় ৪টি উইকেট নেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে এটাই তার সেরা বোলিং ফিগার। মুস্তাফিজুর রহমানও এদিন দাপুটে বোলিং করেন। বাঁহাতি এই পেসারের শিকারও ৪ উইকেট। শেখ মেহেদী হাসান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনরাও এদিন হিসেবি বোলিং করেছেন। সবচেয়ে খরুচে ছিলেন সাকিব আল হাসান, পাননি কোনো উইকেটও।
বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের বিপক্ষে রান তুলতে রীতিমতো হিমশিম খেয়েছে কিউইরা। তাদের কেবল তিনজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করতেপেরেছেন। বাকিরা ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে।
।স্রোতের বিপরীতে ব্যাটিং করেছেন উইল ইয়াং। চার নম্বরে নেমে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৪৮ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৬ রান করেন। ফিন অ্যালেন ১২ ও অধিনায়ক টম ল্যাথাম ২১ রান করেন। বাকিদের কেউ-ই ৪ রানের বেশি করতে পারেননি। নাসুম ১০ রানে ৪টি ও মুস্তাফিজ ১২ রান খরচায় ৪টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট নেন শেখ মেহেদী ও সাইফউদ্দিন।