ভাটির পুরুষ খ্যাত কিংবদন্তি, বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই বাউল সম্রাট ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। গুণী এই সাধকের মৃত্যুর ১২ বছরেও তার স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
স্বপ্ন ছিল তার প্রতিষ্ঠিত শাহ আব্দুল করিম সংগীতালয় থেকে নিজের লেখা গানগুলোর সঠিক সুরে ও সঠিক বাণীতে প্রচার করা। কিন্তু গানের শিক্ষক, যন্ত্রপাতি এবং ভবন না থাকায় তার স্বপ্নগুলো স্বপ্ন থেকেই গেল।
আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম,
গাড়ি চলে না চলে না,
গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু-মুসলমান,
কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি,
কেমনে ভুলিব আমি বাঁচি না তারে ছাড়া,
আমি কূলহারা কলঙ্কিনী,
আমি বাংলা মায়ের ছেলে,
কোন মেস্তরী নাও বানাইলোসহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম। আজ এই গুণী সাধকের ১২ তম মৃত্যুবার্ষিকী।
বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ইব্রাহীম আলী ও মাতার নাম নাইওরজান। দারিদ্র্য ও জীবনসংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া বাউল শাহ আবদুল করিমের সংগীত সাধনার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। বাউল সম্রাটের প্রেরণা তাঁর স্ত্রী আফতাবুন্নেসা। যাকে তিনি আদর করে ‘সরলা’ নামে ডাকতেন।
ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে সকল অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। তিনি আধ্যাত্মিক ও বাউল গানের দীক্ষা লাভ করেছেন কামাল উদ্দীন, সাধক রশীদ উদ্দীন, শাহ ইব্রাহীম মাস্তান বকশ এর কাছ থেকে। তিনি শরিয়ত, মারফতি, নবুয়ত, বেলায়াসহ সব ধরনের বাউল গান এবং গানের অন্যান্য শাখার চর্চাও করেছেন।
বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম প্রায় দেড় সহস্রাধিক গান লিখেছেন এবং সুর করেছেন। বাংলা একাডেমির উদ্যোগে তার ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। তিনি কিশোর বয়স থেকে গান লিখলেও কয়েক বছর আগেও এসব গান শুধুমাত্র ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় ছিল। মৃত্যুর কয়েক বছর আগে বেশ কয়েকজন শিল্পী তার গানগুলো নতুন করে গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলে তিনি দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন।
বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের এ পর্যন্ত ৬টি গানের বই প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলো হলো-আফতাব সংগীত, গণ সংগীত, কালনীর ঢেউ, ভাটির চিঠি, কালনীর কূলে এবং দোল মেলা।
গুণী এই সাধক স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেন একুশে পদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা, সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসহ দেশ বিদেশের অসংখ্য পুরস্কার।
এদিকে বাউল সম্রাটের ১২ তম প্রয়াণ দিবসে শাহ আবদুল করিম পরিষদের উদ্যোগে তার নিজ বাড়ি উজানধলে মিলাদ মাহফিল, জীবন দর্শন নিয়ে আলোচনা ও করিম গীতির আসরের আয়োজন করা হয়েছে।
শাহ আব্দুল করিম পরিষদ দিরাই শাখার সভাপতি আপেল মাহমুদ বলেন, শাহ আব্দুল করিমের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্পপরিসরে বাউল সম্রাটের নিজ বাড়িতে মিলাদ মাহফিল, করিম গীতির আসর অনুষ্ঠিত হবে।
বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের একমাত্র পুত্র শাহ নুর জালাল বলেন, প্রত্যেক বছর আমার বাবার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী আমাদের নিজ উদ্যোগে পালন করে থাকি। এতে সরকারিভাবে কোনো ধরনের সাহায্য সহযোগিতায় পাই না। এসব অনুষ্ঠান করতে আমাদের বাড়িতে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকার কারণে বাড়ির পাশে মাটি ভরাটের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করে এখনো পাইনি। আমার বাবার নিজ হাতে প্রতিষ্ঠিত শাহ আব্দুল করিম সংগীতালয়টি চালু করা সম্ভব হয়নি। আমার বাবার ইচ্ছা ছিল যে এই সংগীতালয় থেকে তাঁর লেখা গানগুলোর সঠিক সুরে ও সঠিক বাণীতে যদি প্রচার হতো তাহলে তার সৃষ্টিটা ঠিক থাকত। কিন্তু গানের শিক্ষক, যন্ত্রপাতি এবং ভবন না থাকায় সংগীতালয়ের কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে করিম পুত্র শাহ নুর জালাল সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
দারিদ্র ও জীবন সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া শাহ আবদুল করিমের সঙ্গীত সাধনার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। বাউল সম্রাটের প্রেরণা তার স্ত্রী, যাকে তিনি আদর করে ‘সরলা’ নামে ডাকতেন। ১৯৫৭ সাল থেকে শাহ আবদুল করিম পাশের উজানধল গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
‘বন্দে মায়া লাগাইছে’, ‘কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি’, ‘বসন্ত বাতাসে সই গো’, ‘তুমি মানুষ আমিও মানুষ’, ‘প্রাণে সহে না দুঃখ বলব কারে’, ‘কোন মেস্তরি নাও বানাইল’, ‘ওরে ভব সাগরের নাইয়া’ সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গীতিকার, সুরকার শাহ আবদুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুযারি সুনামগঞ্জের দিরাই থানার ধলআশ্রম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ইব্রাহীম আলী ও মা নাইওরজান।
গানের মধ্যে প্রাণের সন্ধান পাওয়া শাহ্ আবদুল করিম রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদকসহ (২০০১) পেয়েছেন কথা সাহিত্যিক আবদুর রউফ চৌধুরী পদক (২০০০), রাগীব-রাবেযা সাহিত্য পুরস্কার (২০০০), লেবাক অ্যাওয়ার্ড, (২০০৩), মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার (২০০৪), সিটিসেল-চ্যানেল আই আজীবন সম্মাননা মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস (২০০৫), বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি সম্মাননা (২০০৬), খান বাহাদুর এহিয়া পদক (২০০৮), বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা (২০০৮), হাতিল অ্যাওয়াডর্স (২০০৯), এনসিসি ব্যাংক এনএ সম্মাননা ইত্যাদি।
ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ, প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে সব অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরূদ্ধে। সুনামগঞ্জের কালনী নদীর তীরে বেড়ে উঠা শাহ আব্দুল করিমের গান শুরুতেই ভাটি অঞ্চলে জনপ্রিয় হলেও শহরের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পায় তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে। আর্থিক অসচ্ছলাতার কারণে কৃষিকাজে বাধ্য হলেও কোনো কিছুই তাকে গান রচনা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।
তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে আফতাব সঙ্গীত, গণ সঙ্গীত, কালনীর ঢেউ, ধলমেলা, ভাটির চিঠি, কালনীর কূলে, শাহ আব্দুল করিম রচনাসমগ্র উল্লেখযোগ্য
এ জাতীয় আরো খবর..