ভোগান্তির নাম প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজারের পাসপোর্ট অফিস। আনসার আর পিয়নরাই চালাচ্ছেন অফিস লোকবল সংকটের অজুহাতে তাদের দেয়া হয়েছে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব। আর এই সুবাদে গড়ে উঠেছে দালাল সিন্ডিকেট। অভিযোগ উঠেছে যোগ্যতা না থাকলেও তারা পাসপোর্ট ডেলিভারি, আবেদন, কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়েরও কাজ করছেন। এতে সেবাগ্রহীতাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। প্রতিনিয়তই সেবাগ্রহীতারা এমন হয়রানি আর চরম বিড়ম্বনায় পড়লেও তা থেকে উত্তরণে নেই কোনো স্থায়ী সমাধান। দীর্ঘদিনের এই দূর্ভোগই যেন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।
জানা যায়, মৌলভীবাজার পাসপোর্ট অফিসে সেবা পেতে হলে নির্ধারিত ট্রাভেলস এজেন্সি ও ভ্রাম্যমাণ দালালের মাধ্যমে বাড়তি টাকা দিয়ে আসতে হয়।
তা না হলে ঠিকঠাক আবেদন করলেও অফিসের কর্মচারী ও নিরাপত্তাকর্মীরা নানা ভুল ধরে। দীর্ঘদিন সময়ক্ষেপণ করে হয়রানি করছে। অনলাইনে আবেদন শেষে ফিঙ্গার দিতে এসেও পড়তে হয় চরম বিড়ম্বনায়। নাম কিংবা জন্ম তারিখ সংশোধন হলেতো আর কোনো কথাই নেই।
সরজমিন দেখা গেছে, পাসপোর্ট করতে আসা লোকদের সার্বিক পরামর্শ বা দিক নির্দেশনার জন্য অফিস এলাকায় দৃশ্যমান স্থানে নেই কোনো হেল্পডেস্ক। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও মেলে না সেবা। নেই কোনো শৃঙ্খলা। ১০টা থেকে ২টার মধ্যেই অফিস বন্ধ। অভিযোগ রয়েছে, ওই অফিস ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ অন্যান্য শ্রেণী পেশার লোকজন ও কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ নিয়েই সক্রিয় দালাল সিন্ডিকেট। এ নিয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকের কাছে অভিযোগ দেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে মাঝেমধ্যে অভিযানও চলে। কিছুদিন দৌরাত্ম্য কমার পর আবারো আগের অবস্থায় ফেরে।
সরজমিন আরও দেখা গেছে, ব্যাংক ড্রাফট-এর টাকা ছাড়াও পাসপোর্ট প্রতি বাড়তি ৫-৮ হাজার টাকা নিচ্ছে দালাল সিন্ডিকেট। তারপরও অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময় পার হলেও ১-৫ মাসেও মিলছে না পাসপোর্ট।
জানা যায়, পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে এবং বাইরে লম্বা লাইনের ঝঁক্কিঝামেলা আর পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে প্রশাসনের দীর্ঘসূত্রীতা- এসবের অন্তরালেই রয়েছে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিনব কৌশল। কারণ এতসব ঝুঁটঝামেলা এড়াতেই সাধারণ মানুষ দালালদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন। তবে সেবাগ্রহীতারা নিজ থেকে আরও সচেতন হলে দালালদের দৌরাত্ম্য অনেকটাই কমে যেতো- এমন মন্তব্য সচেতন মহলের।
পাসপোর্ট করতে আসা মৌলভীবাজার সদর উপজেলার এম আহাদ ফেরদৌস, মোক্তাদির হোসেন, বড়লেখার সালাম আহমদ সাজু, হোসনা বেগম, রাজনগরের মো. সামছু মিয়া, মনসুর কোয়েল, কুলাউড়ার তাওহিদুল ইসলাম, সেলিম আহমদ, শামীম আহমদ, কমলগঞ্জের শাহবাজ আলী, জুড়ীর শাহাবউদ্দিন ও সেলিম আহমদ দোলোয়ারসহ অনেকেই জানান, নিরাপত্তা সদস্যসহ অফিসের অনেক অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী সরাসরি এই বাণিজ্যে জড়িত। তারা জানান, আমরা বৈধভাবে কাগজপত্র জমা দিয়ে পাসপোর্ট পাই না। পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য দিনের পর দিন থানায় ধর্ণা দিতে হয়। গুনতে হয় ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। ব্যাংকে টাকা জমা দিতে গেলেও ঝামেলায় পড়তে হয়। অথচ দালাল কিংবা কোনো ট্রাভেলস ব্যবসায়ী একদিনেই অনেকগুলো ভেরিফিকেশন করাতে পারেন। সময়মতো পাসপোর্টও পান।
জানা যায়, মৌলভীবাজার পাসপোর্ট অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে জড়িত প্রায় অর্ধশত দালালের একটি চক্র। শতাধিক ট্রাভেলস ব্যবসায়ী ও পাসপোর্ট অফিসের সামনের কয়েকটি ফটোস্ট্যাটের দোকান নিয়মিত এসব দালালিতে জড়িত। মৌলভীবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. ইউসুফ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কোনো দালালকে তার অফিস এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। এনআইডি ও পূর্বের পাসপোর্টের তথ্যে মিল না থাকলে যাচাই-বাছাই করতে কিছুটা বিলম্ব হয়।
এছাড়া এই অফিসে রয়েছে জনবল সংকট। তিনি গ্রাহকদের আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যার তার সঙ্গে লেনদেন করবেন না। দালালদের সঙ্গে লেনদেন করলে ক্ষতি আপনাদেরই।