সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৬ অপরাহ্ন
নোটিশ :
বাংলাদেশের নিউজ পোর্টাল এর মধ্যে অন্যতম ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সংবাদমাধ্যম দৈনিক চলমান দেশ ডট কম এ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সহ বাংলাদেশের সকল জেলা ও উপজেলা সহ স্কুল, কলেজ থেকে জরুরী ভিত্তিতে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহী মহিলা ও পুরুষ গনকে যোগাযোগ করার জন্য বলা হচ্ছে।  ফোন : ০১৭১৭-৭২৩৭৪২,০১৯১৭-১০২০৮৬। দৈনিক চলমান দেশের সাথে থাকুন পড়ুন ও বিজ্ঞাপন দিন। যোগাযোগ : 01717-723742

মধ্যস্বত্বভোগীরা ১০ টাকার সবজি যেভাবে ১০০ টাকায় বিক্রি করে

ডেস্ক রিপোর্ট:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২১
  • ১২৪ বার পঠিত

কথা হয় বগুড়ার কৃষক তোফাজ্জেল হকের সঙ্গে। সবজি চাষ করে চলে পাঁচ সদস্যের সংসার। নিজের ২ বিঘার সঙ্গে লিজ নিয়েছেন ৫ বিঘা। তাতে আলু থেকে শুরু করে ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর, মুলা, লাউ, কচু, কাঁচামরিচ চাষ করছেন। বিক্রির জন্য বাজারেও যেতে হয় না। মাঠ থেকেই নিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা। তবে পরিবহন খরচ বাঁচলেও প্রকৃত দাম পান না তোফাজ্জেল। মধ্যস্বত্বভোগীর কাছে কমদামেই বিক্রি করতে হয় তাকে। গড়ে তার সবজির দাম পড়ে প্রতিকেজি ৮-১০ টাকা। বাধাকপি, ফুলকপি প্রতি পিস বিক্রি করেন ৫-৬ টাকায়।

 

একই অবস্থা নরসিংদীর কৃষক আইনুল হকের। তিনিও সবজি বিক্রি করছেন গড়ে ৮-১০ টাকা কেজিতে। কখনও আরও কমে যায় দাম। প্রতিপিস লাউ বিক্রি করেন ১০-১২ টাকায়। বাধাকপি ও ফুলকপি প্রতিপিস ৫-৬ টাকা দরে বিক্রি করেন তিনি।

 

দুজন কৃষকই জানিয়েছেন, সরাসরি আড়তে সবজি পাঠাতে পারলে কৃষক-ভোক্তা উভয়েই লাভবান হতো। ৮ টাকায় কৃষকের বিক্রি করা সবজি ভোক্তাকে ৮০ টাকায় কিনে খেতে হতো না।

 

এসব সবজি মাঠ থেকে কিনে যারা রাজধানীতে পাঠান তাদের একজন বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার সিকান্দার হোসেন। বাঁশের ঝুড়িতে সবজি ভরে চট দিয়ে মুখ আটকে ট্রাকে করে পাঠান রাজধানীর কাওরানবাজারে। প্রতিটি ট্রাকে ভাড়া দিতে হয় ২৮ হাজার টাকা। তার ওপর রাস্তায় রয়েছে চাঁদাবাজী। সব মিলিয়ে এক ট্রাক সবজি যখন কাওরানবাজারে পৌঁছায় তখন ৮ টাকার সবজির দাম এমনিতেই হয়ে যায় ২৮ টাকা। আড়তদার তা কিনে নেন ৩০-৩২ টাকায়। তারা আবার মুনাফা করে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা ব্যবসায়ীরা সেটা বিক্রি করেন ৬০-৮০ টাকায়।

 

নরসিংদীর মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী মোবারক হোসেনের দেওয়া হিসাবও একই। তিনি বলছেন, আগে ৮-৯ হাজার টাকায় এক ট্রাক সবজি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শ্যামবাজারে পাঠানো যেত। এখন লাগে ১২-১৪ হাজার টাকা। মোবারক জানান, খুচরা ব্যবসায়ীরাই অস্বাভাবিক হারে মুনাফা করে। যার কারণে দাম বাড়ে। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ, পচে যাওয়া, ওজনে কম পাওয়া এসব তো আছেই।

 

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কৃষকের কাছ থেকে কয়েক হাত ঘোরার কারণেও সবজির দাম দশ গুণ বেড়ে যাচ্ছে। পরিবহন খরচ কমানো গেলেও মধ্যস্বত্বভোগী না থাকলে কৃষক সরাসরি আড়তে পাঠাতে পারতো। এতে কোনও সবজির দাম কিছুতেই ৪০ টাকার বেশি হতো না।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর কাওরানবাজারে ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি-উত্তর) বৈধ আড়তের সংখ্যা ৩৭০-এর বেশি। এর বাইরেও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ছয়টি প্লটের ওপর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আরও কিছু সবজি ও ফলের আড়ৎ আছে। ক্ষুদ্র আড়ত মালিক সমিতির হিসাবে, কাওরানবাজারে প্রতিদিন ৪০০-৫০০টি ট্রাক আসে।

 

রাজধানীর কাওরানবাজার ক্ষুদ্র আড়তদার মালিক সমিতির নেতা আশরাফ আলী ফকির জানিয়েছেন, সবজির অতিরিক্ত দামের জন্য পরিবহন খরচই দায়ী। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মধ্যস্বত্বভোগী। এই দুটি ক্ষেত্র না থাকলে সবজির দাম অর্ধেকে নেমে আসতো বলেও মনে করেন তিনি।

 

জানতে চাইলে রাজধানীর কোনাপাড়া বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মিলন মিয়া জানিয়েছেন, আড়তদাররা ওজনে কম দেয়, পাঁচ কেজির পাল্লায় আমরা পাই সাড়ে ৪ কেজি। এর মধ্যে পচাও থাকে। বাছাই করা যায় না। এভাবে তো বিক্রি করা যায় না। ওই সাড়ে চার কেজি দোকানে আনার পর বাছাই করলে টেকে সাড়ে তিন কেজি। দাম তো বাড়াতেই হয়, না হলে লোকসান হবে।

 

তিনি আরও জানান, কৃষক যে দামে বিক্রি করছে সেই হিসাবে দাম কমই থাকার কথা। কিন্তু বাজারে দাম বাড়ে ট্রাকভাড়া, মধ্যস্বত্বভোগী ও আড়তদারদের কারণে। এগুলো বাদ দিতে পারলে সবজির দাম ৪০ টাকার নিচে থাকতো।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
দৈনিক চলমান দেশে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি-সম্পাদক।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com